করোনা মহামারির মধ্যে বাজারে ওষুধের দাম বাড়ল – News Portal 24
ঢাকাWednesday , ৩০ জুন ২০২১
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আইন ও আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. এক্সক্লুসিভ
  6. কৃষি ও কৃষক
  7. ক্যাম্পাস
  8. ক্রীড়াঙ্গন
  9. খুলনা
  10. চট্টগ্রাম
  11. চাকরির খবর
  12. জাতীয়
  13. জানা-অজানা
  14. ধর্ম
  15. প্রবাস
আজকের সর্বশেষ সবখবর

করোনা মহামারির মধ্যে বাজারে ওষুধের দাম বাড়ল

নিউজ পোর্টাল ২৪
জুন ৩০, ২০২১ ২:৪৮ অপরাহ্ন
Link Copied!

ডেস্ক রিপোর্ট:: করোনা মহামারির মধ্যে বাজারে ওষুধের দাম বেড়ে গেছে। ওষুধ বিক্রেতারা বলছেন, এক মাসের ব্যবধানে ১০-১২টি গ্রুপের ওষুধের দাম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়িয়ে দিয়েছে। উৎপাদকদের যুক্তি, করোনা সংকটে বিশ্বব্যাপী কাঁচামালের দাম বেড়েছে। সে কারণে ওষুধের দাম সমন্বয় করা হয়েছে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বলছে, ফার্মাসিউটিক্যালসগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তারা দাম বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছে।

দাম বাড়ার তালিকায় আছে- ঠান্ডা, হাঁপানি, সাইনোসাইটিস ও অ্যালার্জির ওষুধ। শরীরে নানা ধরনের ‘প্যারাসাইট’ আক্রমণ প্রতিহত করে এমন ওষুধ। ব্যাকটেরিয়াজনিত প্রদাহ প্রতিরোধ করে এমন অ্যান্টিবায়োটিক, প্যারাসিটামল, ভিটামিন-সি, জিংকের ঘাটতি পূরণ করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এমন সম্পূরক ওষুধও।

মগবাজারের বাসিন্দা আজম আলী

মগবাজারের বাসিন্দা আজম আলী তাঁর করোনায় আক্রান্ত বাবার জন্য ভরিজল কিনতে গিয়ে দেখেন, ২০০ এমজির প্রতিটি ট্যাবলেটের দাম ১০ টাকা করে বেড়ে গেছে।

তিনি দোকানির কাছে জানতে চাইলে জবাব পান, সাম্প্রতিক সময়ে এটা ছাড়া আরও অনেক ওষুধের দাম বেড়ে গেছে। পরে রাজধানীর কয়েকটি ওষুধের দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ‘বেশ কিছু জরুরি ওষুধের দাম বেড়ে গেছে।’

পুরান ঢাকার বাবুবাজারের আলিফ লাম মিম মডেল ফার্মেসির বিক্রয় প্রতিনিধি

পুরান ঢাকার বাবুবাজারের আলিফ লাম মিম মডেল ফার্মেসির বিক্রয় প্রতিনিধি পলাশ চন্দ্র দাস বলেন, ‘ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের উৎপাদিত গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট প্যান্টোনিক্স ২০ মিলিগ্রামের (জেনেরিক-প্যানট্রোপ্রাজল সোডিয়াম সিকোহাইড্রেট) প্রতিটি ট্যাবলেটের বাজার মূল্য ছিল ৬ টাকা। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ছয় টাকা ৭৫ পয়সা করে। একই কোম্পানির ইসোনিক্স (জেনেরিক-ইসোমিপ্রাজল ম্যাগনেশিয়াম ট্রাইহাইড্রেট) ২০ মিলিগ্রামের প্রতিটি ট্যাবলেটের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ছিল পাঁচ টাকা।এখন তা ৭ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।’

ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মোস্তফা কামাল পাশা

দাম বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মোস্তফা কামাল পাশা বলেন, ‘বাজারে ইনসেপ্টার চেয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের ওষুধের দাম আরও বেশি। তারা আসলে দাম বাড়াননি, শুধু সমন্বয় করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘কোভিডের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেড়েছে। উৎপাদনে তার প্রভাব পড়ছে।’

ওষুধ ব্যবসায়ী সম্মিলিত পরিষদের সদস্যসচিব জাকির হোসেন

তবে ওষুধ ব্যবসায়ী সম্মিলিত পরিষদের সদস্যসচিব জাকির হোসেন বলেন, ‘করোনার এই মহামারিতে ওষুধ ব্যবসায়ীরা ঔষধ প্রশাসন নিয়ন্ত্রিত ওষুধের দামও বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি মনে করেন , এই মুহূর্তে কোনো ওষুধের দামই বাড়ানো উচিত না।’

মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় অবস্থিত মেসার্স এমএস মেডিকেল হলের বিক্রয় প্রতিনিধি

ওষুধের পাইকারি বাজার বলে পরিচিত মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় অবস্থিত মেসার্স এমএস মেডিকেল হলের বিক্রয় প্রতিনিধি আরিফ রহমান বলেন, ‘টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ব্যবহৃত ড্রাগ ইন্টারন্যাশনালের উৎপাদিত প্রতিটি ডাইমেরল ৮০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেটের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ছিল ৭ টাকা। বর্তমানে দাম বেড়ে আট টাকা হয়েছে। চর্ম রোগীদের জন্য ব্যবহৃত একই প্রতিষ্ঠানের ২০০ মিলিগ্রামের প্রতিটি ভরিজল (জেনেরিক-ভরিকোনাজল) ট্যাবলেটের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ছিল ১১০ টাকা।বর্তমানে তা ১২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানের অ্যাজমা ও অ্যালার্জি রোগীদের জন্য ব্যবহৃত প্রতিটি এম কাস্ট (মন্টিলুকাস্ট) ১০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেটের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ছিল ১৪ টাকা । বর্তমানে তা বাড়িয়ে ১৫ টাকা করা হয়েছে।অবশ্য ওষুধ উৎপাদনকারী প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই এ জাতীয় ওষুধের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস বাংলাদেশের এই জাতীয় ওষুধের আগের দাম ছিল ১৫ টাকা, এক টাকা বাড়িয়ে এখন দাম হয়েছে ১৬ টাকা। একইভাবে ইউহেলথ ইউনিমেড ১৫ থেকে ১৬ টাকা করেছে।’

ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান

জানতে চাইলে ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘তাদের কোম্পানির ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে কীনা তা তিনি জানেন না। প্রধান কার্যালয়ে খোঁজ নেওয়ার পর জানাতে পারবেন।’

বনশ্রী এলাকায় রাহামা মেডিসিন কর্ণারের আলাউদ্দিন আহমেদ

রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় রাহামা মেডিসিন কর্ণারের আলাউদ্দিন আহমেদ জানান, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু ওষুধের দাম বেড়েছে। দাম বাড়া ওষুধগুলো গ্যাস্ট্রিক , ডায়াবেটিক, অ্যাজমা ও সর্দি কাশিতে আক্রান্ত রোগীরা কিনে থাকেন।’

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আবু আজহার

জানতে চাইলে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আবু আজহার বলেন, ‘মনটিলুকাস্ট ট্যাবলেটটি মূলত অ্যাজমা ও যাদের কাশি আছে তাদের দেওয়া হয়। যাদের অ্যাজমা থাকে তারা করোনায় আক্রান্ত হলে সমস্যা বেড়ে যায়। ডায়বেটিস রোগীদের করোনা হলে তীব্রতা বেড়ে যায়। ডেল্টা ভেরিয়েন্টে আক্রান্তের অন্যতম কারণ ছিল ফাঙ্গাল ইনফেকশন। এ জন্য অনেকেই ভরিকোনাজল ট্যাবলেটটি ব্যবহার করছেন। এ ছাড়া করোনায় আক্রান্ত রোগীরা অনেক ওষুধ খাওয়ায় পেটে গ্যাস সৃষ্টি হচ্ছে। এ জন্য তাঁদের গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ইসোমিপ্রাজল ও প্যান্টোপ্রাজল দেওয়া হয়।’

পুরান ঢাকার মিটফোর্ডের ওষুধ বিক্রেতা নুরুজ্জামান

পুরান ঢাকার মিটফোর্ডের ওষুধ বিক্রেতা নুরুজ্জামান জানান, ‘গত এক থেকে দেড় মাসের ব্যবধানে ইনসেপ্টা, একমি, ড্রাগ ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন কোম্পানির বহুল ব্যবহৃত ১০-১২টি গ্রুপের ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। ওষুধের মূল্য যেভাবে বাড়ছে, তাতে মনে হচ্ছে দেশে এসব নিয়ন্ত্রণে কোনো কর্তৃপক্ষ নেই।’

বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এসএম সফিউজ্জামান

ওষুধের দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এসএম সফিউজ্জামান  বলেন, ‘প্যারাসিটামলের কাঁচামালের প্রতিকেজির দাম ছিল ৪০০ টাকা। বিশ্ববাজারে সেই দাম বেড়ে ৮০০ টাকা হয়েছে। তিনি বলেন, অনেক সময়ই ফার্মেসিতে বাড়তি দাম রাখা হয়। তবে কোনো কোনো ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান দাম সমন্বয় করতে পারে।’

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান

ওষুধের দাম বাড়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামাল বেড়ে যাওয়ায় কয়েকটি কোম্পানি ওষুধের মূল্য বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেছিল। ওই আবেদনের ভিত্তিতে দাম সমন্বয় করা হয়েছে।’

তিনি  আরও বলেন, ‘ওষুধ প্রশাসন শুধু ১১৭টি জেনেরিক ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এর বাইরে বাকি সব ওষুধের দাম কোম্পানিগুলো নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।’

দেশে উৎপাদিত সব ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণে দেশে কোনো অথোরিটি নেই বলে মনে করে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব।

সংগঠনের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘ঔষধ প্রশাসন কিছু ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।তবে ওষুধের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। মূল্য বৃদ্ধির আগে সেটির যৌক্তিকতা যাচাই–বাছাই করে বাড়ানো উচিত। করোনার কারণে এখন দেশের মানুষের আয় কম। এই অবস্থায় ওষুধের দাম বাড়ানো কোনোভাবেই ঠিক হয়নি।ব্যবসায় শুধু মুনাফা নয়, জনসেবাও থাকবে হবে।’ সূত্র: আজকের পত্রিকা