অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট ১৯২৩ অনুযায়ী “নিষিদ্ধ স্থান” এরমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পড়ে না। সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালকে “নিষিদ্ধ স্থান” হিসেবে ঘোষণাও করেনি। এখানকার তথ্য বা ডকুমেন্টস ওই অ্যাক্টের মধ্যে আসে না।
অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট : ১৯২৩ এ আইনের ৩ ধারায় বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ স্থানে যদি কেউ যায় বা যেতে উদ্যত হয় কিংবা ওই স্থানের কোনো নকশা বা স্কেচ তৈরি করে বা কোনো গোপন তথ্য সংগ্রহ বা প্রকাশ করে তবে সে অপরাধী হবে। ৩ (ক) ধারায় বলা হয়েছে যে, নিষিদ্ধ স্থানের কোনো ফটো, স্কেচ বা নক্সা কেউ প্রকাশ করতে পারবে না। ৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনো বিদেশী এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে খবর সংগ্রহ করা যাবে না। আইনের ৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো নিষিদ্ধ এলাকা ও সরকার ঘোষিত কোনো এলাকা সম্পর্কীয় কোনো গোপনীয় অফিসিয়াল কোড বা পাসওয়ার্ড বা কোনো স্কেচ, প্ল্যান, মডেল, আর্টিকেল, নোট, দলিলপত্র অথবা তথ্য কোনো ব্যক্তি আইনসঙ্গত দখলে বা নিয়ন্ত্রণে রেখেও যদি যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন না করে, যদি অন্য কোনো ব্যক্তির নিকট হস্তান্তর করে, তার নিয়ন্ত্রণাধীন তথ্যাদি অন্য কোনো বিদেশি রাষ্ট্র ব্যবহার করে, তাতে সেই ব্যক্তি অপরাধী হবে।
৫ (ক) উপধারা অনুযায়ী কোনো প্রতিরক্ষা নির্মাণকাজ, অস্ত্রাগার, নৌ, স্থল বা বিমান বাহিনীর স্থাপনা বা স্টেশন বা খনি, মাইনক্ষেত্র, কারখানা, ডকইয়ার্ড, ক্যাম্প বা বিমান বা গোপনীয় অফিসিয়াল কোড সংক্রান্ত অপরাধে শাস্তি মৃত্যুদণ্ড অথবা ১৪ বছর কারাদণ্ড। অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে দুই বছর কারাদণ্ড।
আবার তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ অনুযায়ী যেসব তথ্য প্রকাশ করা যাবে না বলে বলা হয়েছে- তার মধ্যেও স্বাস্থ্য মন্রণালয়ের ওসব তথ্য পড়ে না।
বৈদেশিক কোনো শত্রু বা এজেন্টকে দেওয়ার জন্যও রোজিনা ইসলাম তথ্য ব্যবহার করেননি বরং জনস্বার্থে বা জনগণকে জানানোর জন্য তথ্য ব্যবহার করেছেন বা করতেন । এই অনুসন্ধানী তথ্য সরকারের দুর্নীতি দমনে শুধু সহায়ক নয়, অপরিহার্যও বটে।
রোজিনা ইসলাম কোনো অপরাধ করেননি, বরং একজন স্বনামধন্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদক হিসেবে সাংবাদিকতার সকল নিয়ম- নীতি মেনেই সাংবাদিকতা করেছেন। অন্যদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বাংলাদেশের সংবিধান লঙ্ঘনসহ কয়েকটি মামলাযোগ্য অপরাধ করেছেন।
১. বাংলাদেশের সংবিধানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। ওই কর্মকর্তারা সরাসরি ওই স্বাধীনতা বাধাগ্রস্থ করেছেন। সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদ, ধারা বা উপধারা অমান্য করলে তা রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবে গণ্য হয়।
২. রোজিনা ইসলামকে ছয় ঘন্টা জিম্মি করে নির্যাতন করা হয়েছে, যা জিম্মি করে হত্যাচেষ্টার মধ্যে পড়ে। অর্থাৎ এটা আইন অনুযায়ী ক্রিমিনাল অফেন্স।
৩. অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট অনুযায়ী, তথ্য চুরির মিথ্যা মামলা করা হয়েছে যা মামলাযোগ্যই নয়। রোজিনা ইসলাম কোনো কর্মকর্তার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করেছেন, তথ্য চুরি করেননি। রাষ্ট্রের ক্ষতি সাধনের জন্য নয়, জনস্বার্থে তথ্য সংগ্রহ করেছেন।
৪. রোজিনা ইসলামকে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করার কারণে অসুস্থ্য হয়েছেন, কিন্তু তার কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। এটাও অপরাধ বা অধিকারের পরিপন্থী।
৫. ওইসব কর্মকর্তা পেশাগত অসদাচরণ করেছেন। এছাড়া একজন নারীকে হেনস্থা করা হয়েছে। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী তা অপরাধ।
এসবদিক বিবেচনা করে প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ মামলা করতে পারে জড়িত স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
স্বাস্থ মন্ত্রণালয় সংবিধানের ধারা অমান্য করে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মত অপরাধ করেছে। এই অপরাধে মামলা করার সুযোগ আছে প্রথম আলো’র।
কন্ঠরোধ করে করে দুর্নীতি ঢাকার যে কৌশল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়েছে- তা বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন, রোজিনা ইসলামকে অবিলম্বে মুক্তি দিন।
লেখক: কয়েছ মিয়া, শিক্ষানবিশ আইনজীবী ও সাংবাদিক।